* গ্যাং লিডার ও পেশাদার কিলার গ্রুপের হাতে রয়েছে অস্ত্রের ভান্ডার
আন্ডারওয়ার্ল্ডে কদর বেড়েছে তরুণ কিলারদের
* শীর্ষ অপরাধীদের মধ্যে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বের কারণে খুনের ঘটনা বাড়ছে
* সন্ত্রাসীদের আস্তানায় মজুত করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রভান্ডার
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ ব্যাপী আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। অপরাধ জগতে দিন দিন যুক্ত হচ্ছে নতুন মুখ। কদর বেড়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কিলার গ্রুপের অপরাধীদের। অপরাধ জগতের গ্যাং লিডার ও পেশাদার কিলার গ্রুপের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ভাণ্ডার। শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে নিত্য নতুন অপরাধীদের ধরণ অনেকটাই পাল্টে গেছে। অপরাধ জগতে চলছে নতুন সমীকরণ ও হিসাব-নিকাশ। আন্ডারওয়ার্ল্ডের কতিপয় গ্রুপের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রবাসে থেকে টাকার ভাগ পাচ্ছেন। মাঠ চষে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রুপের সাঙ্গপাঙ্গরা। ইদানিংকালে মাঠে সক্রিয় আছে উঠতি বয়সের তরুণ কিলার গ্রুপ। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ অপরাধীদের মধ্যে গ্রুপিং, চাঁদাবাজি, ভাগবাটোয়ারা, হুমকি, পূর্ব শত্রুতা ও বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে দেশে খুনের ঘটনা বাড়ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আস্তানায় রয়েছে অবৈধ অস্ত্রভান্ডার। তবে, অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্রের গোপন ভান্ডারে ভারি হয়ে উঠছে জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।
জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুসারে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডিসেম্বর মাসের যেকোনো দিন নির্বাচনী তপসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থীর নাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো বলছে, নির্বাচন কাছাকাছি এলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, কঠোর হাতে দমন করা হবে সন্ত্রাসী তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সবকিছু মাথায় রেখে মাঠে নেমেছে দেশের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারসহ অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এলিট ফোর্স র্যাব, গোয়েন্দা, পুলিশ (ডিবি), থানা পুলিশসহ সমগ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা নগরীসহ সারাদেশ জুড়ে দিবারাত্রি অভিযান চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর অপরাধ জগতে আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শত্রুতা, গ্রুপিং দ্বন্দ্বের কারণে খুন হন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ ওরফে মামুন। পুলিশ বলছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টাকার ভাগবাটোয়ারা, নিজের মধ্যে কোন্দল, সীমানা দখলসহ নানাবিধ দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। যার মূল পরিকল্পনাকারী অপরাধ জগতের আরেক নতুন শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি। দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর মামুন খুনের আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস রনি ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করলেও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অপরাধে যুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও অপরাধ জগৎ ‘গরম’ করার পাঁয়তারা করছে। সম্প্রতি ৩০টির বেশি খুনের ঘটনায় গোয়েন্দারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জড়িত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কারণেই মূলত খুনের ঘটনা দিনদিন বাড়ছে।
দেশের অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তার আর দখলযুদ্ধে নেমেছে। এর থেকে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়। তাছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে এদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বলা যায়, মামুন হত্যার পর অপরাধ জগতে কদর বেড়েছে নয়া সন্ত্রাসীদের। এ যেন চারদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রভান্ডারের ঝনঝনানিতে ভারি হয়ে উঠছে জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ। ঢাবি’র অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো যেন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সহযোগিতা না দেয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের ধরতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তথ্য অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো বলছে, রাজধানীর মিরপুরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে ভয়ংকর গ্রুপ ‘ফোর স্টার’। এ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে অনেকেই। তাদের গডফাদাররা বিদেশে থাকলেও দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রায় শতাধিক তরুণ সন্ত্রাসী। বেশির ভাগই কিশোর গ্যাং সদস্য। এ গ্রুপের দাপটে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মিরপুরবাসী। সম্প্রতি ৫ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে পল্লবীর সাগুফতা এলাকায় একে বিল্ডার্সে হামলা চালায় মামুন বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে ভাষানটেকে তাণ্ডব চালায় কিলার ইব্রাহিম গ্রুপ। আগারগাঁও ও কাজিপাড়ায়ও বিকাশ-প্রকাশ বাহিনীর নামে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। তবে বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং জেল ফেরত আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দেখা দিয়েছে মারাত্মক দ্বন্দ্ব। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলছে।
এবিষয়ে র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের জানমাল নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে র্যাব প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে। অবৈধ অস্ত্রের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সেটা অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলার যেন অবনতি না ঘটে সেই লক্ষ্যে সবকিছু মাথায় রেখে মাঠে নেমেছে র্যাব। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সমগ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। এব্যাপারে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশজুড়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, গোলাবারুদ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি-এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ